কুবিতে একদিন
সাস্টে চান্স হল না। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম, দেখি সাস্টের বাস যাচ্ছে। রুমে এসে হাউমাউ করে কান্না। ততক্ষণে বিভিন্ন জায়গায় ১৫ ইউনিটে এডমিশন টেস্ট দেওয়া শেষ। আম্মু অনেক কষ্ট করে সব জায়গায় যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এবার আর বাসায় টাকা চাওয়ার মুখ নেই, নিজের হাতও খালি। বন্ধুরা হাতে তিন হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলল, আসার সময় রসমালাই নিয়ে আসিস।
লম্বা জার্নি করে বুঝলাম কুমিল্লা অনেক বড়, কারণ আমার গন্তব্য ছিল লক্ষ্মীপুর। ইবরাহিম আংকেল পরীক্ষা দেওয়াতে নিয়ে গেলেন। আপু-দুলাভাইর আকত হয়ে গেছে তখন কিন্তু রিসিপশনের আরও কিছুদিন বাকি। আপুর চাচা শ্বশুরের বাসায় দুপুরে খেয়েদেয়ে বি ইউনিটে পরীক্ষা দিতে গেলাম। কোনো পরীক্ষার আগে সেবারই প্রথম ডিম খেলাম। আমি তখন জিম্বাবুয়ে, হারানোর কিছু নেই। চা খেয়ে রুমে ঢুকে দেখি প্রশ্ন দিয়ে দিয়েছে। রোল বসানোর পর দেখলাম ২৫টা প্রশ্ন মিসিং। কুবির ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি অনেক সুসজ্জিত, মেডিকেল-ঢাবির মত। যখন বুঝলাম আমাকে আরেক সেট এটাচড প্রশ্ন-উত্তরপত্র নিতে হবে, ততক্ষণে ১০ মিনিট চলে গেছে।
হলের স্যার আমাকে নতুন একটা প্রশ্ন দিলেন, সেটার উত্তরপত্র ছিঁড়ে রেখে দিলেন! আমি বললাম স্যার এভাবে তো হবে না, খাতা বাতিল হয়ে যাবে। উনি ভার্সিটির একজন স্যারকে ডেকে কনফার্ম হয়ে তারপর পুরো নতুন একটা সেট দিলেন। ততক্ষণে অন্তত মিনিট পনেরো তো গায়েবই।
পরীক্ষা শেষ করে ফিরছি। আব্বু টেনশন করে যাচ্ছেন আজীবন, অতিরিক্ত টেনশন। ইবরাহিম আংকেলকে জিজ্ঞেস করলেন, সিয়াম ঠিকমত বসেছে তো? আংকেল বললেন, না বেয়াই, ওকে বাসের ছাদে করে নিয়ে যাচ্ছি। আমাকে কল করে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন হল পরীক্ষা? যেখানে যেতাম সব ইউনিট দিতাম। বললাম, এ আর সি ইউনিট হলে হতেও পারে (যেটা আগের ১৫ পরীক্ষায়ও বলেছি), বি ইউনিটে হবে না আব্বু।
এরপর জীবনে প্রথম ডিম খেয়ে দেওয়া পরীক্ষাটায়ই চান্স হল। সেশনজট আছে এমন এক ডিপার্টমেন্ট মাইগ্রেশনের জন্য সিলেক্ট করলাম। এনথ্রোপলজির ফয়সাল ভাই সেদিন ফেরেশতার মত আবির্ভূত হলেন। মাইগ্রেশনের বোকামির কারণে বকা দিলেন, কারেকশন করালেন, যার কারণে বাংলা পাওয়ার ভাগ্য হল। আমার ভর্তির ফরমে সাইন বাদে সব লেখা ফয়সাল ভাইয়ের। সেই অভ্যাস রয়ে গেছে, এখনো কাউকে না কাউকে আমার ফর্ম ফিলাপ করে দিতে হয়।
এই স্ট্যাটাস শেষ করা যাবে না, ধারাবাহিকভাবে অনার্স জীবনের গল্প বলতে পারব কয়েক কিস্তি। আপাতত এখানেই থাক। গ্রেজুয়েট হওয়ার পেছনে ফামিলি, অফিস আর বাংলা বিভাগের অবদান স্যালুট দিয়ে স্মরণ করি। স্যালুট এজন্য যে, তাঁরা আমাকে 'আমি' হয়ে থাকতে সমর্থন যুগিয়েছে!
এবার মাস্টার্সের পালা...
লেখায় ঃ সিয়াম ভাইয়া
Comments
Post a Comment